DENGUE FEVER (ডেঙ্গু জ্বর) BEST TREATMENT IN BENGALI

One share helps bloggers:
Rate this post

  পৃথিবীর সমস্ত মারন জ্বর গুলোর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর (Dengue fever in Bengali) প্রথম সারিতে অবস্থান। এবং এটি একটি ভয়ঙ্কর সংক্রমণ এবং খুব ছোঁয়াচে ধরনের রোগ। তবে সময় মতো সাবধানতা অবলম্বন করলে সহজেই প্রতিরোধ করা যায় ডেঙ্গু (Dengue Treatment in Bengali)। সাধারণ ভাষায় ‘হাড় ভাঙ্গা জ্বর’ নামেও পরিচিত। ডেঙ্গু  বিভিন্ন প্রজাতির মশা দ্বারা বাহিত ও প্রেরিত হয়। তবে প্রধানত এটি “স্ত্রী এডিস এজিপ্টি” সংক্রমিত মশার কামড় দ্বারা এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে একজন থেকে অন্যজনের দেহে।

আনুপাতিক ভাবে কম হলেও কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি জীবন বিপন্ন করা ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার (Dengue Hemorrhagic Fever or DHF) অর্থাৎ রক্তক্ষরিত ডেঙ্গু জ্বরে পরিণত হয়। এবং এটি সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে (Dengue Shock Syndrome or DSS) পরিনত হয়ে যায়। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম এটি ডেঙ্গু জ্বরের একটি গুরুতর জটিলতা। এই জটিলতা তখনই হয় যখন একজন ব্যক্তি, যিনি ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রামিত, তিনি আবার অন্য একটি ভিন্ন ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে সংক্রমণ পান। এর ফলে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমের শুরু হয় এবং একাধিক অঙ্গের ব্যর্থতার কারণে মৃত্যুও হয়।

ডেঙ্গু মশা-বাহিত ভাইরাল সংক্রমণের একটি রোগ। স্ত্রী এডিস এজিপ্ট মশা ডেঙ্গুর ভাইরাসকে এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে সংক্রামিত করে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পান করে মশা সংক্রামিত হয়। চার রকমের ভাইরাস আছে যা এই রোগের কারণ হতে পারে। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের কোন নির্দিষ্ট এন্টি-ভাইরাল চিকিৎসা (Dengue Treatment in Bengali) নেই।

ডেঙ্গু রোগ কি এবং কেন হয়? (Dengue fever in Bengali)

এটি এক ধরনের সংক্রামিত স্ত্রী এডিস এজিপ্টি নামক মশা দ্বারা ডেঙ্গু রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।  এই ধরনের মশা সাধারনত দিনের বেলায় কামড়ায় -রাতে খুব কম। ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস (DENV) ‘ ফ্ল্যাভিভিরিড পরিবারভুক্ত’ একটি ‘রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (আর এন এ)’ ঘটিত ভাইরাস।  এই ধরণের চার প্রজাতির ভাইরাস যথা DENV-১, DENV-২, DENV -৩ এবং DENV-৪   স্বতন্ত্রভাবে দেখা যায়। একটি চক্রের মধ্যে দিয়ে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। একটি স্ত্রী মশা যখন একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ায়, তারপর সেই মশা যখন অন্য কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন এই রোগটি চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে।

Dengue In Bengali

ডেঙ্গু রোগ এর লক্ষ্মণ বা উপসর্গ (Symptoms of Dengue fever in Bengali)

ডেঙ্গুর ভাইরাসটি আপনার শরীরে তৈরি হওয়ার ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং এই সময়কালকে ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ বলে। এই গড় ইনকিউবেশন সময়সীমা ৪-৭ দিন। এই সময়ের মধ্যে যদি ধরা পড়েন আপনি ডেঙ্গু দ্বারা আক্রমিত হয়েছেন তাহলে খুবই ভালো হয়। কেননা এই সময়ের মধ্যে ধরা পড়লে পুরপুরি ভাবে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে না। যে ব্যক্তির ডেঙ্গু হয়েছে সে সম্প্রতি এমন জায়গায় গিয়েছিল যেখানে ডেঙ্গু হচ্ছে । অথবা সেই স্থান থেকে কোন ব্যক্তি এই ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে এসেছে। অথবা ডেঙ্গু আক্রমিত ব্যাক্তিকে মশা কামড়ে সেই মশা অন্য কাউকে কামড়ে দিল। এই ভাবে সংক্রমণ বেড়ে যায় বা ছড়িয়ে যায়।

ডেঙ্গুর উপসর্গ বা লক্ষণগুলো হল নিম্নরূপ: (Symptoms of Dengue fever in Bengali)

১. হঠাৎ খুব বেশি জ্বর হওয়া (40°C/104°F) । জ্বরের ধরণ ধারাবাহিকতা থাকে অথবা ‘স্যাডেল ব্যাক’এর মতো হয়। যেমন চার থেকে পাঁচ দিন টানা জ্বরের পর জ্বর না থাকা তারপর আবার জ্বর বাড়তে থাকা।

২. অসহ্য মাথা ব্যাথা (সাধারণত চোখের পিছনের দিকে খুব বেশি)।

৩. গলা ব্যথা, খাবার সময় অত্যাধিক।

৪. ক্ষুধামান্দ্য এবং ঘুমের অভাব।

৫. ক্রমাগত বমি হওয়া। এবং বমির সাথে কম বেশি রক্ত পড়া।

৬. দ্রুত শ্বাস বা শ্বাস কষ্ট (শ্বাসযন্ত্রের কষ্ট) ।

৭. মুখ অত্যাধিক পরিমানে লাল হয়ে যাওয়া।

৮. সারা গায়ে চামড়ায় লাল মসৃন ফুসকুড়ি বা এলার্জি দেখা যায়। (এলার্জি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন পোস্ট টি দেখতে এলার্জি লিখার উপর ক্লিক করুন)।

৯. শরীর হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া বা কাঁপুনি দেওয়া।

১০. পেশী এবং গাঁটের অসহ্যজনক ব্যথা।

১১. ডেঙ্গুর জ্বরে নাক, দাঁতের মাড়ি বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে পারে (মেয়েদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সাথে অস্বাভাবিকভাবে রক্তপাত)।

১২. গ্রন্থি এবং লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া।

১৩. ডেঙ্গির জ্বরে রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট দ্রুত কমে যেতে শুরু করে।

Dengue Medicine

কাদের ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে?

১. যাদের শরীরের বরাবরই প্লেটলেট সংখ্যা কম স্বাভাবিক এর থেকে। সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্লেটলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

২. যাদের আগে অতিতে এক বার ডেঙ্গু হয়েছে এরকম ব্যাক্তিদের।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম।

৪. বাড়ির আশে পাশে নোংরা জমা জল রয়েছে, এবং খুবই ঘন জনবসতিপূর্ন এলাকা। এরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ডেঙ্গু হয়েছে কি না, কোন পরীক্ষায় জানতে পারবেন? (Dengue Treatment in Bengali)

১. পিসিআর টেস্ট

২. ব্লাড কাউন্ট টেস্ট

৩. প্লেটলেট কাউন্ট টেস্ট

৪. এলিজা বা এলাইজা টেস্ট

ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে – ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’।

প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির হয়ে থাকে।তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই।

‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।

‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে আইসিইউ’র প্রয়োজনও হতে পারে।

ডেঙ্গু আক্রমণের সম্ভাবনা কমানোর জন্য কী কী করতে পারেন? (Dengue Treatment in Bengali)

১. একবার যাদের ডেঙ্গু হয়েছে, তাদের আবার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

২. ডেঙ্গু হওয়া ব্যাক্তিদের থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে।

৩. ডেঙ্গু সংক্রমন ব্যাক্তি কে মশারির ভিতর রাখতে হবে।

৪. বাড়ির আশেপাশে মশা ডিম পাড়তে পারে, এরকম জল জমিয়ে রাখবেন না।

৫. ফুল হাতা জামা পরুন।

৬. ওডোমস জাতীয় কোন ক্রিম ব্যাবহার করতে পারেন। এতে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৭. মশার কয়েল বা ধুপ জ্বালিয়ে রাখতে পারেন বাড়িতে।

৮. ধুনো ব্যাবহার খুব ভালো প্রতিকার পাওয়া যায়।

৯. DDT বা ওই ধরনের মশা নাশক কীটনাশক ব্যাবহার করতে হবে।

Dengue Fever In Bengali

চিকিৎসা ও বিভিন্ন রকমের ঘরোয়া প্রতিকার (Dengue Treatment in Bengali)

রোগটির নিজেরই একটি সময় সীমা রয়েছে, অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে নিজেই মিটে যায়। এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য ১৫-২০ দিনের মত সময় লাগে। উপসর্গগুলি চলে যাওয়ার পরও ব্যক্তিটি দীর্ঘকাল ধরে প্রায় ৬-৯ মাস  ক্লান্তি এবং অবসাদ বোধ করতে পারেন।

এখানো পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধের কোনো টিকা নেই। এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উত্তম উপায় হচ্ছে মশার কামড় এড়িয়ে চলা। সব ধরনের ডেঙ্গুতেই যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়, তা নয়। অবশ্য, রোগের নিয়ন্ত্রণ এবং উপসর্গগুলির তীব্রতা কম করতে নিজের যত্ন নেওয়া দরকার। এবং নিম্নলিখিত ভাবে জীবনধারার কিছু পরিবর্তন করা দরকার-

১. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন এবং ডাবের জল খান।

২. প্যারাসিটামল বা প্যারাসিটামল জাতীয় কোন ওষুধ খেতে পারেন।  এতে শরীরের তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৩. বাড়ির অন্য জনের মধ্যে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।

৪. ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যাক্তি কে সর্বদা মশারির ভেতরে রাখুন।

৫. অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফিন এই জাতীয় ঔষধ রক্তপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই এই জাতীয় ওষুধ কোন ভাবেই ব্যাবহার করবেন না।

৬. ORS (Oral Rehydration Solution), লেবুর শরবত এবং ফলের রস খান।

৭. পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম বা ঘুম।

৮. উপসর্গ চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন অবশ্যই।

Dengue Best Medicine

সাধারণ ভাইরাল ফিভারের সঙ্গে ডেঙ্গি জ্বরের বিশেষ একটা ফারাক না থাকলেও ইদানীং যেহেতু এই জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। তাই জ্বর ৪৮ ঘন্টা পেরোলেই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে চিকিত্সকের কাছে যান। চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। মনে রাখবেন, চিকিতসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া চলবে না। প্রয়োজনে চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে প্লেটলেট কাউন্ট পরীক্ষা করিয়ে নিন। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।।

==========

Subscribe and Join Our Telegram Group

Follow & Like us on Facebook

Download Nursing Knowledge Apps 

One share helps bloggers:

Leave a Comment